শিশুর ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ, করনীয়

শিশুর ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ, করনীয়
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় বর্ষাকালে। সতর্ক না হলে শিশু থেকে সব বয়সি মানুষ বর্ষাকালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। ডেঙ্গির সবচেয়ে ঝুঁকি হচ্ছে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া। শিশুসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এতে মৃত্যুঝুঁকি আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন। * যে ভাবে বুঝবেন শিশুর ডেঙ্গি জ্বর হয়েছে- * প্রথম পর্যায় : তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত জ্বর স্থায়ী হতে পারে। * তীব্র জ্বর (১০৩ ডিগ্রি থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। * বমিভাব বা বমি করা। * তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে কপালের দিকে। * পুরো শরীর ব্যথা এবং গিঁটে ব্যথা। * চোখের পেছনে ব্যথা, যা চোখের মণি ঘুরালে বাড়ে। দ্বিতীয় পর্যায় : এ সময়ে জ্বর কমে যায়, কিন্তু রক্তক্ষরণ বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। যা দু’তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। কখনো কখনো শুধু হাতের তালু, পায়ের তালু বা শরীরের ত্বকের নিচে লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। শরীরের ভেতর রক্তক্ষরণ হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো হলো- * তীব্র এবং একটানা পেট ব্যথা। * বারবার বমি এবং সঙ্গে রক্ত যাওয়া। * খুব বেশি পিপাসা পাওয়া বা জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া। * নাক-মুখ, দাঁতের মাড়ি বা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ। * আলকাতরার মতো পায়খানা। * জ্বরের সঙ্গে শরীরে লাল লাল দাগ দেখা যাওয়া। * প্রস্রাব কমে যাওয়া। * চোখের সাদা অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া। * অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। * শরীর ঠান্ডা বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া। বিশেষ লক্ষণগুলো হলো- * ঘুম ঘুম ভাব। * একটানা কান্না। * শ্বাসকষ্ট। এসব লক্ষণের যে কোনো একটি দেখা গেলেই শিশুকে দ্রুত ডাক্তার দেখান বা হাসপাতালে নিয়ে যান। * তৃতীয় পর্যায় : অল্প ক’দিনের মধ্যে শিশু ভালো হয়ে যায়। যদিও শরীরে দুর্বল ভাবটা থেকেই যায় তারপরেও রোগী খেতে পারে, চলাফেরা করতে পারে। সব মিলিয়ে পুরো অসুস্থতার সময়টা ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা * শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে রাখতে চেষ্টা করুন। বারবার কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। * জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন (দিনে চার বারের বেশি নয়)। আইবুপ্রুফেন, এসপিরিন, ডাইক্লোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না। এগুলো রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। * শিশুকে বেশি করে পানি বা পানি জাতীয় খাবার দিন, যেমন-খাবার স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, দুধ, ফলের রস এবং এসবের সঙ্গে অন্যান্য খাবার দিন। * বারবার বমি হলে হাসপাতালে নিয়ে যান। * রক্তক্ষরণজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিন। * ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঘুমের সময় বিছানায় মশারি ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে হালকা রঙের ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরাতে হবে, যাতে হাত ও পা পুরোপুরি ঢেকে যায়। স্কুলের ইউনিফর্মও যাতে পুরো হাত ও পা ঢেকে যায়। পা পুরোপুরি ঢেকে রাখতে মোজা এবং জুতা পরাতে হবে। সম্ভাব্য কারণ হলো, ডেঙ্গি ভাইরাসের চারটি ধরনের পার্থক্য, তা ছাড়া কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তার জটিলতা বেশি হয়। এ ছাড়া ভাইরাসটির বিরুদ্ধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও প্রতিক্রিয়ার কারণেও জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মনে রাখবেন * জ্বর হলে জ্বর কমাতে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। * কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীরে স্পঞ্জ করতে হবে। * পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন ও তরল পান করাতে হবে। * জটিলতা এড়াতে শিগ্গির চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। * ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। * বাড়ির পরিষ্কার-পরিছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে কোথাও যেন পানি না জমে থাকে।